পৃথিবীতে যত যুদ্ধ, রক্তারক্তি, হানাহানি এবং মামলা-মোকদ্দমা হয়েছে বা হচ্ছে তার পিছনে প্রধানত কাজ করতেছে মানুষের স্বার্থপরতা। ইতিহাস যদি দেখেন খেয়াল করবেন এই যে পলাশীর যুদ্ধ হয়েছিল ইংরেজদের স্বার্থপর মনোভাবের কারণে। তারা অন্যায়ভাবে এদেশে একচেটিয়াভাবে ব্যবসা করে দেশীয় ব্যবসায়ীদের ধ্বংস করে দিচ্ছিল। আবার নবাব সিরাজুদ্দৌলা পলাশীর যুদ্ধে হেরে গিয়েছিলেন মীর জাফরের বেঈমানী বা স্বার্থপর মনোভাবের কারণে। তিনি শুধু নিজের চিন্তা করেছেন দেশের মানুষের কথা একবারও ভাবেন নি। যদি ভাবতেন তবে আমাদেরকে দু’শ বছর ইংরেজদের তাবেদারী করতে হত না। আমাদের দেশে যারা দূর্ণীতিবাজ রাজনীতিবিদ আছেন তারা একবারও চিন্তা করেছেন দেশের মানুষের কথা যারা তাকে মূল্যবান ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। সে শুধু নিজের চিন্তা করে কার কি সমস্যা তা নিয়ে তার মাথা ঘামানোর প্রয়োজন অনুভব করে না। শুধু নির্বাচনে জেতার জন্য যা করা দরকার তা করে। মানুষ যদি একটু কষ্ট স্বীকার করে তাহলে মানুষের সেবা করা তার জন্য কোন ব্যাপার-ই না। এই যেমন যিনি প্রাইভেট কার চলাফেরা করতেছেন কিংবা ছেলেকে মাসিক দশ হাজার বেতনের স্কুলের পড়াচ্ছেন তিনি কি কখনো ঐ ছেলেটির কথা চিন্তা করেছেন যে পাঁচশ টাকার জন্য বই কিনতে পারছে না। যিনি বাথটাবে গোসল করে গ্যালনের পর গ্যালন পানি খরচ করতেছেন তিনি কি চিন্তা করতেছেন যে পৃথিবীতে মিষ্টি পানির পুঁজি অচিরেই শেষ হয়ে যাবে, আমি এভাবে পানি খরচ করলে হয়তো ভবিষ্যত প্রজন্ম খাওয়ার জন্য মিষ্টি পানি পাবে না। যিনি গ্যাসের চুলায় ঘন্টার পর ঘন্টা কাপড় শুকাচ্ছেন কিংবা বিনা কারণে ছোট করে জ্বালিয়ে রাখছেন তিনি চিন্তা করতেছেন যে পৃথিবীতে গ্যাসের মজুদ সীমিত তাই আমরা যদি সচেতন না হই, যদি গ্যাসের অপচয় করি তবে ভবিষ্যত প্রজন্ম হয়তো শীতকালে গা গরম করার জন্য গ্যাসের আগুন পাবে না। আসলে তারা শুধু নিজেদের চিন্তাই করে। অন্যের চিন্তা করার মনমানসিকতা তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়নি। আমি শিক্ষিত মানুষকে যতই শ্রদ্ধা করি ততটাই ঘৃণা করি। তবে সুশিক্ষিত মানুষকে খুব শ্রদ্ধা করি এবং ভালবাসি। কিন্তু সব শিক্ষিতই তো আর সুশিক্ষিত নয়। শিক্ষিত মানুষ এক লাইন বেশি বোঝে। তাই কাউকে উপকার করার আগেও হাজার রকম চিন্তা করে। কিন্তু কাউকে উপকার করতে হয় তবে সব বুদ্ধি-যুক্তি বাদ দিতে হয়। এটাই হল নিঃস্বার্থ উপকার। কিন্তু শিক্ষিত লোক প্রত্যেক উপকার এর পেছনে যুক্তি খোজে। অর্থাৎ তার থেকে আমি প্রতিউপকার পাব কিনা বা সে আমাকে কখনো উপকার করেছে কিনা কিংবা সে আসলেই এই উপকারের উপযুক্ত কিনা সবকিছু বিবেচনা করে। যেটা আমি মোটেই পছন্দ করি না। আপনি সবকিছুর পেছনে লাভ খোজেন তবে তা উপকার নয় বরং বিনিয়োগ বলা যেতে পারে। কারণ বিনিয়োগ করলেই না লাভের চিন্তা করে কিন্তু উপকার করে লাভের চিন্তা করাটা মূর্খতার সামিল কিন্তু বাস্তবতা হল শিক্ষিতরাই এই কাজটি বেশি করে থাকে। তাই আমি বলতে চাই স্বার্থপর মাত্রই সমাজের জন্য অভিশাপ হোক সে বড় কোন শিক্ষিত লোক কিংবা সাধারণ মানুষ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন